কম্পিউটারের নিরাপত্তা (Computer Security)

- তথ্য প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | | NCTB BOOK
1

কম্পিউটারের নিরাপত্তা (Computer Security) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যা কম্পিউটার সিস্টেম এবং ডেটাকে সুরক্ষিত রাখে এবং সাইবার আক্রমণ, ম্যালওয়্যার, ভাইরাস, এবং ডেটা চুরির মতো ঝুঁকিগুলি থেকে প্রতিরোধ করে। কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রতিটি ব্যবহারকারী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাইবার আক্রমণ থেকে ডেটা এবং সিস্টেমের ক্ষতি হতে পারে।

কম্পিউটারের নিরাপত্তার মূল উপাদানসমূহ:

১. নেটওয়ার্ক সুরক্ষা (Network Security):

  • নেটওয়ার্ক সুরক্ষা হলো নেটওয়ার্ক এবং ডেটা ট্রান্সফার সুরক্ষিত করার প্রক্রিয়া। এতে ফায়ারওয়াল, অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার, এবং এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা নেটওয়ার্কে অননুমোদিত প্রবেশ প্রতিরোধ করে।

২. এন্ডপয়েন্ট সুরক্ষা (Endpoint Security):

  • এন্ডপয়েন্ট সুরক্ষা হলো কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলিকে সুরক্ষিত রাখা। এটি অ্যান্টি-ভাইরাস এবং অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

৩. ডেটা এনক্রিপশন (Data Encryption):

  • ডেটা এনক্রিপশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ডেটাকে কুটলিপ্ত করে এবং শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যবহারকারীরা ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে। এটি ডেটা চুরি বা ম্যান-ইন-দ্য-মিডল আক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।

কম্পিউটারের নিরাপত্তার প্রধান ঝুঁকিগুলি:

১. ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার:

  • কম্পিউটার ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে এবং ডেটা ক্ষতিগ্রস্ত করে। ম্যালওয়্যার সাধারণত ই-মেইল, ফাইল শেয়ারিং, এবং ক্ষতিকারক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়ায়।

২. ফিশিং আক্রমণ (Phishing Attack):

  • ফিশিং আক্রমণে ব্যবহারকারীদের সংবেদনশীল তথ্য চুরি করতে প্রতারণামূলক ই-মেইল বা মেসেজ ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যবহারকারীদের লগইন তথ্য এবং ব্যাংক ডেটা চুরি করতে পারে।

৩. র‍্যানসমওয়্যার (Ransomware):

  • র‍্যানসমওয়্যার কম্পিউটারকে লক করে বা ডেটা এনক্রিপ্ট করে এবং ব্যবহারকারীর কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করে। এটি ডেটা পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করে।

কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায়:

১. অ্যান্টি-ভাইরাস এবং অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ইনস্টল:

  • কম্পিউটারে অ্যান্টি-ভাইরাস এবং অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ইনস্টল করে ডিভাইসের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার সনাক্ত করে এবং তা মুছে ফেলে।

২. ফায়ারওয়াল ব্যবহার:

  • ফায়ারওয়াল ইনস্টল এবং সক্রিয় করা উচিত, যা নেটওয়ার্কের ট্রাফিক ফিল্টার করে এবং অননুমোদিত প্রবেশ প্রতিরোধ করে।

৩. নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবহারে জোর:

  • ব্যবহারকারীদের শক্তিশালী এবং অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে উত্সাহিত করা উচিত, যা কম্পিউটার এবং অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক।

৪. ডেটা ব্যাকআপ করা:

  • নিয়মিত ডেটা ব্যাকআপ করা প্রয়োজন, যাতে সাইবার আক্রমণ বা ডেটা ক্ষতির পরও ডেটা পুনরুদ্ধার করা যায়।

৫. সফটওয়্যার এবং সিস্টেম আপডেট:

  • সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ আপডেট এবং প্যাচ ইনস্টল করা উচিত, কারণ এতে সিকিউরিটি ফিক্স এবং উন্নত নিরাপত্তা প্রদান করা হয়।

কম্পিউটারের নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ আইনি নিয়ম:

১. ডেটা প্রোটেকশন আইন:

  • বিভিন্ন দেশে ডেটা প্রোটেকশন আইন রয়েছে, যা ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। যেমন, ইউরোপের GDPR (General Data Protection Regulation)।

২. সাইবার নিরাপত্তা আইন:

  • সাইবার নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল তথ্য এবং নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রণীত হয়। এটি সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ এবং শাস্তির জন্য ব্যবহৃত হয়।

৩. কপিরাইট এবং আইপি সুরক্ষা:

  • কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কপিরাইট আইন এবং আইপি সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা অননুমোদিত সফটওয়্যার কপি এবং পাইরেসি প্রতিরোধ করে।

সারসংক্ষেপ:

কম্পিউটারের নিরাপত্তা হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া, যা কম্পিউটার এবং ডেটাকে সুরক্ষিত রাখে। নেটওয়ার্ক সুরক্ষা, এন্ডপয়েন্ট সুরক্ষা, ডেটা এনক্রিপশন, এবং আইনি নিয়মের মাধ্যমে কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। সাইবার আক্রমণ এবং ম্যালওয়্যার প্রতিরোধে এসব পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Content added By
Content updated By
Promotion